খুলনা, বাংলাদেশ | ২০শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ৩রা জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

Breaking News

  টাঙ্গাইলে ট্রাকের পেছনে মাইক্রোবাসের ধাক্কায় নিহত ৩
  রাজধানীর খিলগাঁওয়ে বাসচাপায় পুলিশের এসআই নিহত

‘প্লাস্টিক দূষণ মোকাবেলায় রাষ্ট্রীয়ভাবে আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে’

গেজেট ডেস্ক

“প্লাস্টিক দূষণ প্রতিরোধে সকলে, একসাথে, এখনই” স্লোগানকে সামনে রেখে বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে মানববন্ধন ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রবিবার (১ জুন) সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক)-খুলনা, টিআইবি, পরিবেশবাদী সংগঠন বেলা, রুপান্তর, ক্লিন, পরিবর্তন, আইআরভি এবং পরিবেশ সুরক্ষা মঞ্চ এই কর্মসূচির আয়োজক।

মানববন্ধনে বক্তারা প্লাস্টিক দূষণ মোকাবেলা করার জন্য জন গনসচেতনতা বাড়ানোর সাথে সাথে রাষ্ট্রীয় ভাবে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া এবং আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করার উপর জোর দেন। মানববন্ধন বেশকিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়। অন্যদিকে মানববন্ধন পরবর্তীতে সনাক কার্যালয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানে সনাক খুলনার এর সভাপতি অধ্যাপক রমা রহমানের সাভাপতিত্বে উদ্বোধনী বক্তব্য দেন সনাক সহ সভাপতি ও পরিবেশ বিষয়ক উপ কমিটির সদস্য জনাব গৌরাঙ্গ নন্দী, মুল বক্তব্য উপস্থাপন করেন সনাক এর পরিবেশ বিষয়ক উপ কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক আনোয়ারুল কাদির। এছাড়া দিবসের উপরে আলোচনা করেন পরিবেশ সুরক্ষা মঞ্চের সদস্য সচিব সুতপা বেদজ্ঞ, বেলা’র বিভাগীয় সমন্বয়ক মাহফুজুর রহমান মুকুল, সনাক সদস্য শামীমা সুলতানা শীলু, প্রফেসর মোহাম্মদ জাফর ইমাম, আইআরভি এর নির্বাহী পরিচালক মেরিনা পারভিন জুথি, পরিবর্তন খুলনা, ক্লিন, রুপান্তর এর প্রতিনিধি, ইয়েস দলনেতা জয়দ্রত শীল এবং টিআইবি এর ক্লাস্টার কো-অর্ডিনেটর জনাব মোঃ ফিরোজ উদ্দীন।

আলোচনা সভায় বক্তারা আইনের কঠোর প্রয়োগের পাশাপাশি, নাগরিকদের সচেতনার মাধ্যমে প্লাস্টিকের কারণে পরিবেশ দূষণের যে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তা কমিয়ে আনা সম্ভব বলে মনেকরেন। প্লাাস্টিক পরিবেশ এবং মানব স্বাস্থ্যের উপর যে মারাত্মক প্রভাব পড়ছে তা বক্তাদের আলোচনায় উঠে আসে। প্লাস্টিক দূষণ এখনি নিয়ন্ত্রণ না করা গেলে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসবে। অধ্যাপক আনোয়ারুল কাদির বলেন ‘প্লাস্টিক দূষণ কমাতে হলে এর রুটে যেতে হবে। যেখান থেকে উৎপাদন হচ্ছে তা বন্ধ করতে হবে, উৎপাদন বন্ধ না করে প্লাস্টিক পণ্য বা পলিথিন বন্ধের জন্য রাষ্ট্রের নির্দেশনা দেওয়াটা দ্বিমুখী আচারনের নামান্তর, এভাবে প্লাস্টিক দূষণ রোধ করা অসম্ভব’।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে রমা রহমান বলেন ‘প্লাস্টিক দূষণ এখন মহামারী আকার ধারণ করেছে, সম্মিলিত ভাবে মোকাবেলা করতে না পারলে আমাদের ভবিষ্যৎ আরও অন্ধকার হয়ে যাবে। আজকের আয়োজনে সাথে যে সকল সংগঠন যুক্ত ছিলেন তাদেরকে ধন্যবাদ দেন, একই সাথে পরিবেশ নিয়ে কাজ করে এমন আরও যারা আছেন তাদেরকে সাথে নিয়ে আরও বড় পরিসরে প্লাস্টিক দূষণ এর বিরুদ্ধে কাজ করতে হবে’। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সনাক, ইয়েস, এসিজি সদস্যবৃন্দ, বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিবৃন্দ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন টিআইবি, খুলনা এর এরিয়া কোঅর্ডিনেটর-সিই মোঃ আব্দুল্লাহ-আল-মামুন।

মানববন্ধনে টিআইবি যেসব সুপারিশ তুলে ধরেন-

১। ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে প্লাস্টিক দূষণমুক্ত দেশ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে হবে সেই ঘোষণা ২০২৫ সালের আইএনসি সভা থেকে প্রদান করতে হবে;
২। “ন্যাশনাল থ্রিআর স্ট্রাটেজি ফর ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট” কৌশলপত্রটি হালনাগাদ ও সংশোধনসহ পরিবেশ সংক্রান্ত বৈশ্বিক প্রতিশ্রুতির আলোকে একটি আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে;
৩। প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ, পৃথকীকরণ, পুনঃপ্রক্রিয়াজতকরণের ব্যবস্থাসহ একটি আধুনিক ও কার্যকর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতে পরিবেশ অধিদপ্তর, সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভাগুলোর কারিগরি ও আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে;
৪। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা-বিষয়ক সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং জনসচেতনতা ও প্রচারণামূলক কার্যক্রম বাস্তবায়নে সরকারি-বেসরকরি প্রতিষ্ঠান, উদ্যোক্তা, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, শিক্ষার্থী এবং তরুণসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে;
৫। প্লাস্টিক শিল্পের জন্য আমদানি শুল্ক বৃদ্ধি ও অন্যান্য প্রণোদনা হ্রাস করে পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণকে উৎসাহিত করতে হবে;
৬। অপ্রাতিষ্ঠানিক প্লাস্টিক পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকারীদের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমে অন্তর্ভূক্ত করার লক্ষ্যে একটি দীর্ঘমেয়াদি কর্মপরিকল্পনা তৈরি করতে হবে এবং প্লাস্টিক-সংক্রান্ত অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত থেকে পরিবেশ দূষণ হ্রাস করতে হবে;
৭। সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। বিশেষকরে, ‘উৎপাদনকারীর সম্প্রসারিত দায়িত্ব’ সম্পর্কিত নির্দেশিকাটির ব্যপক প্রচারণা নিশ্চিত করতে হবে;
৮। যত্রতত্র প্লাস্টিক ফেলা বন্ধ এবং পরিবেশ দূষণ রোধে সাধারণ জনগণের মধ্যে প্লাস্টিকের নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে;
৯। নদী, জলাশয় ও পরিবেশের বিভিন্ন উৎসে থাকা প্লাস্টিক বর্জ্য অপসারণসহ পরিবেশ সুরক্ষা কার্যক্রমে নাগরিক উদ্যোগকে উৎসাহিত করতে সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে;
১০। প্লাস্টিক দূষণ ও পরিবেশের ক্ষতিসহ এখাত-সংশ্লিষ্ট অনিয়মের সাথে জড়িত প্রতিষ্ঠানকে আইনের আওতায় আনতে হবে।

খুলনা গেজেট/এমএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!